ঘুষ গ্রহনে নিশ্চুপ রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ

ওয়ারলেসে বৈধতার দোহায়ে অবৈধ দখল, ঘুমন্ত রেলের কর্তারা

Passenger Voice    |    ১০:৩০ এএম, ২০২০-১২-০৭


ওয়ারলেসে বৈধতার দোহায়ে অবৈধ দখল, ঘুমন্ত রেলের কর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রেলের ভূ-সম্পত্তির জায়গায় লিজ নিয়ে দোকান নিমার্ণ করে ব্যবসা পরিচালনাকারী ব্যক্তিরা অবৈধ ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে রেলের কানুনগো আমিনদের ম্যানেজ করে সেমিপাকা দোকানকে দ্বিতলা বিশিষ্ট পাকা দোকানে পরিনত করে পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও রেলের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তাদের ঘুম ভাঙ্গছে না। ব্যবসায়ীদের দাবী রেলের সাবেক বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল বারীর সাথে আলোচনা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য তারা এই দোকান গুলো তৈরি করেছিল। আবদুল বারীর সাথে তাদের একটি দহরম মহরম সম্পর্ক থাকায় তাদের আশ্বাস দিয়েছিল নতুন নীতিমালায় এই অবৈধ দোকান গুলোকে বৈধতা দিবে। তবে দোকান মালিকদের এই বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান না থাকায় আবদুল বারীর মায়াবী কথায় তারা এই অবৈধ দোকান নিমার্ণ করেছিল।  

এদিকে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা রেলের কর্তা ব্যক্তিরা এইসব অবৈধ দোকান গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নারাজ। তবে একটি সূত্র বলছে দোকান নিমার্ণ করা এই গ্রুপটি প্রতি মাসে একটি মাসোহারা দিয়ে থাকে রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তাদের। ফলে ঘুষ গ্রহনে নিশ্চুপ রেলের এই বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। 

বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২০ অনুযায়ী রেলের বাণিজ্যিক লিজের চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী রেলের ভূমি লিজ নিলে আধা পাকা অথবা সেমি পাকা ঘর ছাড়া কোন স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা যাবেনা। এমনকি সেমি পাকা ঘর নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে নকশা অনুমোদন করাতে হয়। অথচ নগরীর ওয়ারলেস মোড়ে রেলের জমি লিজ নিয়ে বৈধ দোকানগুলোর উপরে স্থায়ী ছাদ ঢালায় দিয়ে দুই তলা পর্যন্ত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, এছাড়াও রেলের জায়গায় অবৈধ ভাবে আরো বেশ কিছু দোকানও তৈরি করা হয়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা এই দোকানগুলোতে যেমন রয়েছে দুর্ঘটনা হওয়ার ঝুঁকি তেমনই এগুলো লিজের শর্ত ভঙ্গে শামিল। অথচ আইনে এমন অনিয়মের জন্য লিজ গ্রহিতার লাইসেন্স বাতিলের বিধান থাকলেও যোগসাজসের এই দুর্নীতির কারনে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না।  সংশ্লিষ্টরা মনে করছে এতে সাধারণ জনগণ রেলের জায়গা দখল করে যে অনিয়ম করছে তাতে দেশের যে পরিমান ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় এইসব ঘুমন্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের কারনে। 

আরও পড়ুন >>> ব্যক্তিস্বার্থে অদক্ষ স্টেশন মাষ্টার বদলী করা দূর্বল ডিটিও দিয়ে পরিবহন সচল সম্ভব নয়

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ওয়ারলেস মোড় থেকে টিএনটি গেট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই রয়েছে এই দোকানগুলো। প্যাসেঞ্জার ভয়েসের কাছে একাধিক দোকান মালিক জানায়, ২য় তলার এই দোকানগুলোর ভাড়া হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকায়। তবে পছন্দের দোকানটি পেতে হলে দিতে হয় মোটা অংকের এডভান্স। যা একেক দোকান থেকে দুই থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনকি এককালীন দোকান বিক্রি করার অভিযোগও আছে এই দোকান মালিকদের বিরুদ্ধে। তবে আইন বলছে লিজ গ্রহিতা যদি কোন কারনে প্লটটি অন্যের নামে নামজারি করতে চায় সেক্ষেত্রে প্রধান ভূ-সম্পত্তি দফতরের অনুমতি লাগে তবে ওয়ারলেস এলাকায় এমনও দোকান আছে যা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়ায় টাকার বিনিময় অন্যের নামে নামজারি করা হয়েছে।

এদিকে লিজগ্রহীতাদের অভিযোগ তারা রেলের কর্মকর্তাদের থেকে অনুমতি নিয়েই অতিরিক্ত এই দোকানগুলো নির্মাণ করেছে। এর জন্য প্রতি মাসে কর্মকর্তাদের মাসিক মাসহারা দিতে হয়। এই ভাড়ার অর্ধেকই রেলের কর্মকর্তাদের দিতে হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দোকানদাররা। অন্যদিকে অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। রেলের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বিভিন্ন সময় এই দোকানগুলো উদ্ধারের জন্য এবং অভিযান করে উচ্ছেদের জন্য পদক্ষেপ নিলেও রাজনৈতিক পরিচয়দানকারী কিছু ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এই দোকানদাররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রেলের কর্মকর্তাদের কোন ব্যবস্থা নিতে দেয় না। এক্ষেত্রে উক্ত কর্মকর্তার সৎ ইচ্ছা থাকলেও তারা একদিকে যেমন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেনা তেমনই তাদের ইচ্ছাও প্রকাশ করতে পারছেনা।

বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে রেলের জমিতে অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। এরকম হলে আমরা লিজ গ্রহীতাদের শোকজ করবো। এর পর লাইসেন্স বাতিল করে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনা করা হবে।  

আরও পড়ুন >>> শুদ্ধাচার পুরস্কার পাওয়া রেলের এডিজি মিয়া জাহানের অনিয়মের তদন্ত দুদকে